বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম :
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আজ মধ্যরাতে। রাত বারোটা এক মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গে দু’ বাংলার ছিটমহলবাসীর প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বলে উঠবে মোমবাতির আলো। বহুল প্রতীক্ষিত এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দুদেশের ছিটমহলবাসীদের মধ্যে চলছে বাধভাঙ্গা আনন্দের নানা আয়োজন। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১৫২ নং ভিতরকুটি ছিটমহলের সাধারন সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি।ছিটমহলবাসী ১৯৪৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দী জীবনের অবসান ঘটিয়ে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছেন। তারা ফিরে পাচ্ছেন নাগরিক অধিকার।
আগামীকাল শনিবার থেকে ভারতের ছিটমহলে বাংলাদেশের পতাকা ও বাংলাদেশের ছিটমহলে ভারতের পতাকা উড়বে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে আজ মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের সীমানায় চলে আসবে। যার আয়তন ১৭১৬০.৬৩ একর। অন্যদিকে ভারতের মূল ভূখ-ের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল হয়ে যাচ্ছে ভারতের। এগুলোর আয়তন ৭১১০.০২ একর।
ছিটমহলবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যা সমাধান হওয়ায় আজ শুক্রবার মধ্য রাতে ছিটমহলের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিনটি স্মরণীয় করে রাখার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ছিটমহলগুলোতে মশাল জ্বালিয়ে আলোকিত করে ওড়ানো হবে স্ব-স্ব দেশের জাতীয় পতাকা। রাতভর চলবে নাচ- গানসহ নানা আনন্দ-উৎসব। মসজিদ-গির্জায় চলবে প্রার্থনা।
৬৮ বছরের নাগরিকত্বহীন জীবনের অবসান ঘটানোর প্রতীক হিসেবে ৬৮ টি মোমবাতি জ্বালিয়ে অভিনব কর্মসূচী পালনের মধ্যে দিয়ে বরণ করে নেয়া হবে দিনটিকে। এরই মধ্যে ছিটমহলগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি ছাড়াও ছিটমহলগুলোতে পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী।
বুধবার লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ছিটমহল ভিতরকুটি গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার অধিবাসীরা আজ মধ্যরাতকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নে অবস্থিত ১৫২ নং ভিতরকুটি ছিটমহলের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান জানান, আজকের দিনটি হচ্ছে ছিটমহলবাসীদের দীর্ঘ বঞ্চনা অবসানের দিন, তাই রাষ্ট্রহীন ছিটমহলের মানুষগুলো তাদের নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দে ওই দিন মধ্যরাতের পর পরই নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ বনিতা নির্বিশেষে একযোগে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে। রাতভর তারা নেচে-গেয়ে, আনন্দ- উল্লাসে মেতে উঠবে।
ভিতরকুটি ছিটমহলের অধিবাসী অবসরপ্রাপ্ত আনসার সদস্য মফিজ উদ্দিন জানান, দীর্ঘ অপেক্ষা আর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমরা বিজয়ী হয়েছি। আগামীকাল থেকে আমরা হতে যাচ্ছি বাংলাদেশি নাগরিক। নতুন করে নাগরিকত্ব পেয়ে আমরা আনন্দের জোয়ারে ভাসছি। তাই দিনটিকে বরণ করে নিতে আমরা প্রস্তুতির কাজে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছি। ছিটমহলবাসীদের মুক্ত করে আলোর পথ দেখাতে যারা অবদান রেখেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন মরেও শান্তি পাব।
ছিটমহলের অপর এক বাসিন্দা মোবারক হোসেন পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেরিতে হলেও আজ মধ্য রাতে এ বন্দী দশা থেকে ছিটমহলের মানুষ মুক্তি পাবে এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবে। এই আনন্দ চলছে এখন ছিটমহলগুলোর বাড়িতে বাড়িতে। ১ আগস্ট সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে মুছে যাবে ছিটমহলের নাম। এর মধ্য দিয়ে ছিটমহল সমস্যার সমাপ্তি ঘটবে। তাই দিনটিকে বরণ করে নিতে দুদেশের ছিটমহলগুলোতে চলছে নানা আয়োজন। বাংলাদেশ-ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুদেশের ১৬২ টি ছিটমহলেই ওইদিন রাত ১২ টায় ১ মিনিটে একযোগে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছিটমহলবাসী।